শ্রীপুরের ট্যাবলেট

কোচিং এর কাজে খুলনা যাচ্ছিলাম। গুলিস্তান টু মাওয়ার একটা গাড়িতে উঠে, দেখি চলিতেছে সার্কাস, নাই দর্শকের অভাব।
আহ কি তামাশা!
পাঁচ মিনিট পর গাড়ি ছাড়বে বলাতে টিকিট কেটেছি, কিন্তু গাড়িটা টেক অফ করতে ঘন্টা খানিকের ও বেশী সময় লাগালো।
কেরানীগঞ্জের বাবুবাজার ব্রীজ পার হওয়া পর্যন্ত যে কত কোটি বিলিয়ন ধুলাবালি বাসে ঢুকেছে, তার হিসাব করা গেলেও, বাস যে কতবার থেমে থেমে যাত্রী উঠায়ছে (যদিও আর পা ফেলার জায়গা ছিলনা) তার হিসাব মিলানো এখনো সম্ভব হয়নি। এমনটায় চলমান ছিল শ্রীনগর এর কিছুটা আগে পর্যন্ত। 
অতঃপর বিরক্তপূর্বক, পাশের সিটের লোককে সাইডে রেখে, জোর করে গেটটা লক করে দিতে উঠে গেলাম।
অার কনডাক্টরকে বল্লাম, শ্লা বাস আর এক জায়গাতেও যাত্রী উঠাতে দাঁড়াইলে, তখন কিন্তু মাইর খাবি।
--কনডাক্টর: আচ্ছা ভাই আর থামবো না।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তারপর একটু ঝিমাচ্ছিলাম,
অতঃপর হঠাৎ বিকট আওয়াজে,
---আপনারা ঠিকই মাওয়াঘাটে চলে যাবেন!
আমিও গাড়ি থেকে নেমে যাব,
কিন্তু আপনাদের
হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে, 
মাজায়-কোমরে, লুঙ্গীর ভিতরে 
সেই ব্যাথা-দুব্বলতা কিন্তু থেকে যাবে।
বাস তারপর আর যাত্রী না উঠালেও শ্রীনগরে একজন যাত্রীকে নামাতে দাঁড়িয়েছিল, তখন বাসে উঠেছিল, একজন এম.বি.বি.এস., এফ.সি.পি.এস, বিভিন্ন সমস্যায় ভোগা রোগীদের নিরাময়ক ডঃ ফাপর আলমাল ওরফে অন্ডকোষ (ছদ্মনাম),
(প্রকৃত নাম বাবলু পাটোয়ারী)
তার বয়ানে আমি মুগ্ধ---
"মানুষ বলে টাকা খরচ করেও, ভালো ঔষধ পায়না, আর আমাদের কোম্পানি বলে আমরা তো অসুস্থ রোগীই পাইনা"
তার ভাষ্যমতে, এক ট্যাবলেটই যেনো, দুনিয়ার সব রোগের নিরাময়ক। 
তাছাড়াও তিনি বলছিলেন....
বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, লজ্জায় বলতে পারেন না? 
(আরো কিছু অশালীন কথাাবার্তা)।
১ পাতা ১০০, ২ পাতা ২০০।
(যা দেখে আমার মনে হলো যে ওরা এটা দশ টাকা দিয়েও দুইপাতা ক্রয় করেনি)
তিনি যে প্রচারপত্র টা পড়তে দিলেন,
ওটাতেও লেখা আছে যে,
"শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড ডক্টরের জন্য"
কিন্তু আমরা কেন এইগুলা ডঃ ফাপর আল-মাল-কালের কাছ থেকে ক্রয় করি, তার কারক-বিভক্তি আমি বের করতে অক্ষম।
তবে যেইটা বুঝলাম, যে এইটা আবেগে করি,
যখন ডঃ ফাপর বলেন যে, আপনার বাবা-মা বাতের ব্যাথায় হাটতে-চলতে পারেনা,
প্যারালাইসিস এ ভুগছে, তখন কত টাকায় তো খরচ করেন, এখন মাত্র ১০০ টাকা খরচ করে দেখেন।
লাইফ গ্যারান্টি দিলাম যে এর ১টা ট্যাবলেট খাবে, জীবনে তার প্যারালাইসিস হবেনা। 
ইহা চুনিলে (শুনিলে) মৃত মানুষ ও জীবিত হয়ে যায়।
অতঃপর মাওয়াঘাটে আসলাম, স্পীড বোটের টিকিট কাউন্টারে টিকিট কাটতে যাচ্ছি,
কাউন্টারের পাশেই জোয়ান-মদ্দ এক মহিলা দেখি বাচ্চাটাকে নিচে দাড়িয়ে রেখে হাত টেনে টেনে ধরে (আপত্তিজনকভাবে) সাহায্য চাইছে,
পাশকেটে কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে স্পীড বোটে উঠলাম, যাত্রীরা সব লাইফ জ্যাকেট পরিধান করিয়া, বসিয়া আছেন,
তারপরেও দেখি আমাদের পাইলটের খোঁজ নাই। তিনি তখন ব্রি খাইতে গিয়েছিলেন।
অনেকেই দেখি বিরক্ত হইয়া এমন গালি দিচ্ছেন, মনে হলো যেনো ডিপজলের গান গাইছেন, পুত কইরা দিমু, আমি পুত কইরা দিমু।
স্পীড বোট থেকে নেমে মাইক্রো গাড়িতে উঠলাম, মাইক্রোর কাঁচ ঠেলে এক পাগড়ীওয়ালা হুজুর মসজিদের জন্য সাহায্য করতে বলছেন।
আদতে ঐ নামে কোনো মসজিদ আছে কিনা তাই নিয়ে যাত্রীরা সন্দিহান। 
এছাড়াও গতকাল ৩ই মার্চের ভ্রমণ পরিক্রমাতে ছিল আরো অনেক কিছুই, যেগুলি শুনলে আপনারা বলবেন, "কেউ আম্রে মাইরালা" 
তবে হ্যাঁ আমার কাছে সবগুলো ঘটনায় শ্রীপুরের ট্যাবলেটের মতো মনে হয়েছিল।

Comments

Popular posts from this blog

পাঁচ জেলার ইংরেজি বানান পরিবর্তন করা হয়েছে।

এক্সট্রোভার্ট আর ইন্ট্রোভার্টের মাঝামাঝি একটা জাত আছে। অ্যামবিভার্ট বলে এদের।